ইসলাম
[ সত্য কথা বলুন, ৭০ রকম বিপদ থেকে মুক্ত থাকবেন। ]
[ পুরো সালাম দেবেন, পুরো জবাব দেবেন। পাপ থেকে মুক্ত থাকবেন ]
আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবাই(কথায় ও কাজে) আল্লাহ তা’আলার পবিত্রতা ঘোষণা করে, যিনি রাজ্যাধিপতি, (দোষঞ্জ থেকে ) পবিত্র, পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। তিনিইতো (আরবের) নিরক্ষর লোকদের মধ্যে তাদেরই (স্বজাতি) থেকে একজন রাসুল প্রেরণ করেছেন। তিনি তাদেরকে আল্লাহর আয়াত সমূহপাঠ করে শুনান, তাদেরকে (মিথ্যা বিশ্বাস ও নিন্দনীয় চরিত্রাবলী থেকে) পবিত্র করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও প্রজ্ঞার বিষয় শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ( আপনার নবীরূপে আগমনের পূর্বে) প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত ছিল। ( বয়ানুল-কোরআন )
হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বর্ণনা করেন,আমরা একদিন রসূলে করীম (সাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি তখন সাহাবায়ে কেরামের একটি বড় সমাবেশের উদ্দেশে বক্তৃতা করছিলেন। ইতিমধ্যে একটি লোককে সামনের দিকে থেকে আসতে দেখা গেল। তার পোশাক ছিল শুভ্র ও চুলগভীর কাল রঙের। তার উপর সফরের কোন চিহ্নও দেখা যাচ্ছিল না। ( যাতে মনে হচ্ছিল লোকটি বহিরাগত নয়।) এর সাথে সাথে এ বিষয়টিও ছিল যে, আমাদের মধ্য থেকে কেউ এইনবাগতকে চিনতনা। (এতে মনে হচ্ছ্লি; সে বহিরাগত।) লোকটি উপস্থিত সাহাবায়ে-কেরামের বৃত্ত অতিক্রম করে অবশেষে রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর একেবারে সামনে এসে হাঁটু গেড়ে এমনভাবে বসেগেল যে, তার হাঁটুকে রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাঁটুর সাথে মিলিয়ে দিল এবং হস্তদ্বয় রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উরুর উপর স্থাপন করল। অতপর বললঃ হে মোহাম্মদ (সঃ) আমাকে বলুন, ইসলাম কি?
তিনি বললেনঃ ইসলাম (অর্থাৎ, তার আরকান) এই যে, তুমি (অন্তরে ও মুখে) সাক্ষ্য দেবেঃ আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ্ (অর্থাৎ, এবাদতের যোগ্য সত্তা) নেই ও মোহাম্মদ তাঁর রসুল। নামাজ কায়েম করবে, যাকাত দান করবে রমজান মাসের রোযা রাখবে এবং সামর্থ্য থাকলে বায়তুল্লাহর হজ্ব করবে। এ জবাব শুনে নবাগত প্রশ্নকারী বললঃ আপনি সত্য বলছেন। বর্ণনাকারী হযরত ওমর (রাঃ) বলেনঃ আমরা খুবই বিস্ময়বোধ করলাম যে, লোকটি প্রশ্ন করে এবং অতপর নিজেই জওয়াবের সত্যায়নও করে। এরপর লোকটি আরয করলঃ এখন আমাকে বলুন
ঈমান কি?
নবী করীম (সঃ) বললেন ঈমান এ যে, তুমি আল্লাহকে, তাঁর ফেরেস্তাগণকে, রসূলগণকে, কিতাবসমূহকে এবং কিয়ামতের দিবসকে সত্য বলে জানবে। প্রত্যেক মঙ্গল-অমঙ্গল তথা তকদীরকেও সত্য বলে বিশ্বাস করবে ও মানবে। এ কথা শুনেও সে বললঃ আপনি ঠিকই বলছেন। অতঃপর লোকটি আরয করলঃ এবার বলুন
ইহসান কি ?
রসূল (সাঃ) বললেনঃ ইহসান হল এ যে, তুমি আল্লাহর এবাদত – বন্দেগী এমনভাবে করবে, যেন তাঁকে প্রত্যক্ষ করছ। তুমি তাঁকে না দেখলেও তিনি তোমাকে দেখছেন। এরপর সে আরয করলঃ আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে বলুন, এটি কবে হবে? রসূলে করীম (সাঃ) বললেনঃ এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা অধিক জ্ঞাত নয়। লোকটি বললঃ তাহলে আমাকে কিয়ামতের কিছু আলামতই বলুন। রসূলে করীম (সাঃ) বললেনঃ
(এর এক আলামত তো এই যে,) বাঁদী তার প্রভুকে প্রসব করবে এবং (দ্বিতীয় আলামত এই যে,) তুমি দেখবে, যাদের পায়ে জুতা এবং পরনে বস্ত্র নেই এবং যারা রিক্তহস্ত ও ছাগলের রাখাল, তারা প্রাসাদোপম অট্টালিকা নির্মাণ করতে শুরু করবে। এতে একে অপরকে পেছনে ফেলে যেতে চেষ্টা করবে।
হযরত ওমর (রাঃ) বলেনঃ এ আলোচনার পর নবাগত লোকটি প্রস্থান করল। কিছুকাল অতিবাহিত হওয়ার পর একদিন রসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকেবললেন ওমর, জান সে প্রশ্নকারী লোকটিকে ছিল? আমি আরজ করলামঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ তিনি ছিলেন জিবরাইল (আঃ) তিনি তোমাদের মজলিসে এসেছিলেন, তোমাদেরকে (প্রশ্নত্তরে) তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্য।
(মুসলিম,বুখারী,মা’আরেফুল-হাদীস)