Updates

Home » ইবাদাত » মাহে রমজান মাসের ফজিলত

পবিত্র মাহে রমজান  এক মহা মর্যাদাশালী মাস। এ মাস হলো আল্লাহর রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এর চেয়ে সম্মানিত মাস আল্লাহর নিকট আর নেই। এই মাসে যে মানুষ আল্লাহর রহমত পেলনা, তার গুণাহ মাফ করিয়ে নিতে পারলনা এবং দোযখ থেকে নাজাতের ব্যবস্থা করে নিতে পারলনা, তার চেয়ে ভাগ্যহীন দুর্ভাগা আর নেই।

বিশ্ব নবী (সঃ) বলেছেন, ”আল্লাহর নিকট রামাযানের চেয়ে বড় কোন মর্যাদাশালী মাস আর নেই”।

তিনি আরও বলেছেন,“এ মাসের প্রথম দশদিন হলো আল্লাহর রহমতের, দ্বিতীয় দশদিন মাগফিরাতের এবং তৃতীয় দশদিন দোযখ থেকে মুক্তির।

মহানবী (সঃ) বলেন-“এ মাসের প্রতিটি ফরয অন্য মাসের ৭০টি ফরযের, এবং প্রতিটি সুন্নাত ও নফল অন্য মাসের এক একটি ফরযের সমান।

এ পবিত্র মাসেই মহা পবিত্র আল-কোরআন মহানবী (সঃ) এর নিকট নাযিল হয়।

ইরশাদ হচ্ছে

“ রামাযান মাস, এ মাসেই আল-কোরআন নাযিল হয়েছে”। (সুরা বাকারা আয়াত ১৮৫)

পবিত্র রামাযান লাইলাতুল ক্বদরে পবিত্র কোরআন নাযিল হয়েছে ঃ ইরশাদ হচ্ছে-

“নিশ্চয়ই আমি এটা মুবারক রাতে নাযিল করেছি”। (আদ-দুখান আয়াত ৩) আরও ইরশাদ হচ্ছে-

আর ঐ রাতের ফযীলত হচ্ছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম” (আল-কদর আয়াত ৩)

এমনকি এ মাসের প্রতিটি রাতের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসুলে করিম (সাঃ) এর নিকট এসে রামাযান মাসের রাতে ইবাদত করা এবং তার ছাওয়াব অর্জন করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো নবী করীম (সাঃ) উত্তরে বললেন-

“ঈমানদার ব্যক্তি রামাযান মাসের

# প্রথম রাতে পাপ থেকে এমন ভাবে পবিত্র হয়ে যায়, যেমনি সে ভূমিষ্ট হওয়ার সময় পাপ থেকে পবিত্র ছিল।

# দ্বিতীয় রাতে-তার পিতা মাতাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।

# তৃতীয় রাতে-বিশিষ্ট একজন ফেরেস্তা আহ্বান করেন যে, হে ঈমানদার তোমার অতীত জীবনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হলো।

# চতুর্থ রাতে-তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর, ও কোরআন মজীদের অক্ষরের সমতুল্য ছওয়াব তাকে প্রদান করা হয়।

# পঞ্চম রাতে- মসজিদে হারামে নামাজ আদায় কারীর সমতুল্য ছওয়াব তাকে দান করা হয়।

# ষষ্ট রাতে- বাইতুল মামুরে ফেরেস্তাগণের সাথে তাওয়াফ করার সমতুল্য ছওয়াব তার আমল নামায় লেখা হয়।

# সপ্তম রাতে- ফিরাউন ও হামানের মুকাবেলায় হযরত মুসা (আঃ) কে সাহায্য করার সওয়াব হাসিল হয়।

# অষ্টম রাতে- এতই ছওয়াবের অধিকারী হয়, যে রকম হযরত ইব্রাহিম এর উপর দিবানিশি রহমত বর্ষিত হতো।

# নবম রাতে- পয়গম্বর গণের সাথে ইবাদত করার সমতুল্য ছওয়াব সে অর্জন করে।

# দশম রাতে- মহান আল্লাহ তা’য়ালা তাকে উভয় জগতের সৌন্দর্য ও মঙ্গল দান করেন।

# একাদশ রাতে- ঐ ব্যাক্তি মৃত্যুর সময় নবজাত শিশুর ন্যায় পাপ থেকে পবিত্র হয়ে মৃত্যু বরণের মর্যাদা পায়।

# দ্বাদশ রাতে- রোযাদারের চেহারা হাশরের ময়দানে ১৪ তারিখের (পূর্ণিমার) চাঁদের মত উদ্ভাসিত হবে।

# ত্রয়োদশ রাতে- কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি সমস্ত বিপদ ও অনিষ্ট থেকে নিরাপদ এবং মুক্ত থাকবে।

# চর্তুদশ রাতে- কিয়ামতের দিন তাঁর সামনে এজন ফেরেস্তা এসে তাঁর সম্পর্কে আল্লাহর নিকট স্বাক্ষ্য দিবেন যে, হে আল্লাহ! এই ব্যাক্তি তারাবীর নামাজ পড়েছিল। ফলে তার হিসাব নিকাশ সহজ হবে।

# পঞ্চদশ রাতে- আরশ বহন কারী ফেরেস্তা সহ সমস্ত ফেরেস্তাগণ তার জন্য দুয়া করেন।

# ষোড়শ রাতে- মহান রাব্বুল আলামীন তাঁকে দোযখ থেকে মুক্তি এবং বেহেশতে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করবেন।

# সপ্তদশ রাতে- তাকে নবীগণের ইবাদতের সমতুল্য ছাওয়াব দেয়া হবে।

# অষ্টদশ রাতে- একজন ফেরেশতা আহ্বান করবেন যে, হে রোযাদার বান্দা! আল্লাহ তা’য়ালা তোমার এবং তোমার পিতা মাতার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন।

# ঊনবিংশ রাতে- পৃথীবির সমস্ত পাথর ও ঢিলা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে।

# বিংশ রাতে- শহীদ ও নেককারদের ছাওয়াব প্রদান করা হবে।

# একবিংশ রাতে- তাঁর জন্য জন্নাতুল ফেরদাউসে একটি আলোকিত প্রাসাদ নির্মাান করা হবে।

# দ্বাবিংশ রাতে- কিয়ামতের দিন সমস্ত চিন্তা বেদনা থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হবে।

# ত্রয়োবিংশ রাতে- তার জন্য জান্নাতুল ফেরদাউসে একটি শহর নির্মাণ করা হবে।

# চর্তুবিংশ রাতে- তাঁর ২৪ টি দোয়া কবুল করা হবে।

# পঞ্চদশ রাতে- তার কবরের শাস্তি চিরদিনের জন্য মাফ করে দেয়া হবে।

# ষষ্টদশ রাতে- অতিরিক্ত ৪০ বছরের ইবাদত সমতুল্য ছওয়াব তাকে প্রদান করা হবে।

# সপ্তবিংশ রাতে- তাকে পুলসিরাতে বিজলীর ন্যায় পার করিয়ে দেয়া হবে।

# অষ্টাদশ রাতে- রাতে জান্নাতে তার মর্যদা আরও বৃদ্ধি করা হবে।

# উনত্রিংশ রাতে- তার আমল নামায় ১হাজার মকবুল হজ্বের ছাওয়াব লেখা হবে।

# ত্রিংশ রাতে- পরবর্তি সমস্ত রাতের চেয়ে অধিকতর পুরষ্কারও মর্যাদা তাঁকে প্রদান করা হবে।

(মাহে সিয়াম ও মাজালিসুল আবরার অবলম্বনে)

ইসলামের মূল পাঁচটি স্তম্ভের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে সিয়াম বা রোজা। প্রত্যেক সাবালক ও সুস্থ মুসলিম নর-নারীর জন্য পবিত্র রামাযানের মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছেঃ

“ হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য সাওম (রোজা) ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের প্রতি যেন তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার। (সূরায়ে বাকারা আয়াত ১৮৩)

পবিত্র হাদিসে ইরশাদ করা হয়েছেঃ

“ এমন অনেক সিয়ামকারী রয়েছে, যাদের কেবল ক্ষুধা আর পিপাসা দ্বারা তাদের ভাগ্যে আর অন্য কিছু জোটেনা। তেমনি রাত্রিতে ইবাদতকারী অনেক মানুষ এমন আছে যারা কেবল মাত্র রাত্রি জাগরণ ব্যতিত আর কিছুই লাভ করতে পারে না। মহান আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আরও ইরশাদ করেছেন

“যে ব্যক্তি মিথ্যা ও অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করবেনা, তারা কেবল খানা পিনা পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। ৯ বুখারী, তিরমিজী ও আবু দাউদ শরীফ)

বস্তুতঃ সিয়ামের নৈতিক, আত্মিক ও আধ্যাতিক চাহিদার প্রেক্ষিতে যারা প্রকৃত অনুগামী ও বিশ্বস্থ হতে পারেন, তারাই সত্যিকার অর্থেই সিয়াম সাধক।

অতএব এমন মর্যাদা ও ফযীলত পূর্ণ মাসের সিয়াম সাধনার মিথ্যাকথা, বেহুদা ভাষা, অন্যায় আচরণ ও গীবত, পর নিন্দ সহ সকল পাপ পংকিলতা থেকে নিজেকে বিরত রেখে রোজার তাৎপর্য উপলদ্ধি করে সহীহ শুদ্ধভাবে রোযা পালন ও ছাওয়াব অর্জনে তৎপর হওয়া কর্তব্য।

Leave a Reply

Categories

%d bloggers like this: