জ্যোতিষ জ্যোতিষ খেলা (বারো রাশির সাধারন ফল: কুম্ভ রাশি)
(২০ শে জানুয়ারী-১৮ ফেব্র“য়ারী) [ফাল্গুন]
১# কুম্ভ রাশি স্বরূপ ঃ
কুম্ভ রাশির জাতক অশ্ব সদৃশ্য কষ্টসহিষ্ণু, মনোহর, বিমলচিত্ত, স্থিরধনে অভিলাষযুক্ত, মান্য, কুটিলান্তকরণ, ধন্যাঢ্য, বহুপরিবারযুক্ত, জ্ঞাতি ও বন্ধুবর্গসহ আমোদকারী এবং পরজনের হিতকারী হয়ে থাকেন
২# কুম্ভরাশি কেমন ঃ
কুম্ভরাশির জাতক অত্যন্ত রুচিশীল হয়ে থাকে। স্টাইলের দিক দিয়েও এরা অত্যন্ত সচেতন। তবে এসব কিছুতেই এরা কনভেশনের বাইরে হয়ে থাকে। এদের কপাল সাধারণত বড় হয়ে থাকে ও মুখমন্ডল হয় বর্গাকার। তবে নাক একটু মোটা হয়। এদের চোখ বড় হয় এবং দৃষ্টি থাকে দূরে নিবন্ধ। এদের চুল সরু ওরেশমী। চোয়াল হয় দৃঢ় ও শক্ত।
তুলা লোকদের মতো না হলেও কুম্ভ লোকেরা গড়ের তুলনায় একটু বেশ্ইি সুন্দর। এরা সাধারণত ভালো খেলোয়াড় হয় এবং এদের শারীরিক গঠন হয় পিম। তবে এদের সমস্যা হয় পায়ে। এরা প্রায়ই রক্তসঞ্চালন জনিত রোগে ভুগে থাকে। এই রাশি সবচেয়ে জটিল ও দ্বান্দ্বিক চরিত্রের। এদের মনের তাল খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। তবে এরা অত্যন্ত বন্ধুবৎসল। দরিদ্র ও নিষ্পেষিতদের প্রতি এরা অত্যন্ত দয়ালু হয়ে থাকে।
৩# কুম্ভরাশি প্রকৃতি ঃ
জাতক সামাজিক, উৎসাহী, উগ্র প্রকৃতিবিশিষ্ট, অনুভবপটু, একাগ্রতাসম্পন্ন, ভাবুক, আত্মভিমানী, সং¯্কারপ্রিয় ও উচ্চাআকাংক্ষী হয়ে থাকেন। সাধারণের সঙ্গে সহজেই ইনি মেলামেশা করতে ভালবাসেন, এসোসিয়েশন, ক্লাব, পরিষদ প্রভৃতিতেও স্বেচ্ছায় সাগ্রহে যোগ দেন। তবে সর্বক্ষেত্রেই মত প্রধান্য বজায় রাখতে সচেষ্ট হবেন। মতদ্বৈধতা দেখা দিলে ইনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসবেন। সবার সঙ্গে সব রকমের কাজ মিলেমিশে করতে ইনি আগ্রহী, তবে অতি ক্ষুদ্র কোন সংস্থানের মধ্যে দীর্ঘকাল আবদ্ধ থেকে কাজ করা তার পক্ষে সুখপ্রদ নয়। বস্তত জাতক চাইবেন প্রশস্ত ও বৈচিত্রময় কর্র্ম¯ম্পাদন করতে। জাতকের মানসিক জোর অত্যন্ত প্রবল। যে কোন বিষয়েই ইনি মনোনিবেশ করুন না কেন, শত বাধা বিঘœ সত্তেও একাগ্রতার সঙ্গে তা সম্পাদন করতে চেষ্টিত হবেন। কোনরূপ অনুনয়-বিনয়, নিন্দা-স্তুতি তাকে কর্তব্যচ্যুত করতে পারবে না। এই একাগ্রতা, সু-পথে অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে, বিজ্ঞানচর্চা, রাজ্যপরিচালন অথবা যে-কোন মহৎ কর্মে পরিচালিত হলে জাতকের পক্ষে উচ্চাসন লাভ করা এবং আধ্যাত্মিক বা জাগতিক ব্যাপারে প্রসিদ্ধি লাভ করা আদৌ অসম্ভব নয় কিন্তু। পক্ষান্তরে বিপথগামী হলে নীতিজ্ঞানশূন্য, নাস্তিক, সমাজদ্বেষী এবং স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠাও তার পক্ষে বিচিত্র নয়। জাতক সর্বদা এমন চিন্তা করবেন, যেন ঊর্ধ্ব ভিন্ন মন কখনও অধোগামী হতে চেষ্টিত না হয়। নিত্য নব কাজ বা মত ও পথের প্রতিই তার সবশেষ ঝোঁক বিদ্যমান। ইনি চান যুগোপযেগী সব ধরণের অগ্রজমূলক কর্মসম্পাদন করতে এবং অন্য দশজনের চেয়ে বড় হয়ে থাকতে। ভাবে বিভোর হয়ে ইনি যে- কাজে হাত দেবেন, তন্ময়চিত্তে তাতেই মেতে থাকবেন, অন্যদিকে লক্ষ্য করার মত অবসর তার থাকবে না। এজন্য সাধারণ্যে তিনি খেয়ালী বা মানসিক রোগাগ্রস্থ বলেও উপহাসাস্পদ হতে পারেন।
সংস্কারপ্রিয়তার জন্য রাষ্ট্র-সমাজ প্রভৃতিতে ইনি সর্বদা নবতর পরিবর্তন সাধনে সচেষ্ট হবেন। কাজেই অগ্রগতিমূলক সর্ববিধ কাজে ইনি সাগ্রহে যোগ দেবেন। উদ্ভাবনীশক্তিবলে অনেক নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারেন। সহানুভূতিপূর্ণ মনের জন্য সাধারণে তাকে বিনয়ী সাধু লোক বলেই ভাববে। লোকচরিত্র-নির্ণয়ে ইনি সিদ্ধহস্ত। অপরের চারিত্রিক ক্ষুদ্রতম দোষ-ত্র“টিও তার দৃষ্টি এড়াবে না। সহজেই অন্য সবার সঙ্গে মিলে জনপ্রিয় হতে বা নেতৃত্ব স্থানে আরোহণ করতে তাকে ততটা বেগ পেতে হবে না।
স্বীয় মতের প্রতি আস্থাসম্পন্ন হলেও তার মনে কোনরূপ গোঁড়ামি বা সঙ্কীর্ণতা স্থান পাবে না। যুক্তিপ্রমাণবলে যখনই বুঝতে পারবেন, স্বীয় মতাদর্শ পরিত্যাগ করে নবতর আদর্শে দীক্ষিত হতে ইনি দ্বিধাকরবেন না এই পরিবর্তনেও তার আবেগের প্রাধান্যই পরিলক্ষিত হবে। এতে লোকে তাকে খেয়ালী বা অস্থিরচিত্ত ধারণা করতে পারে। ইনি নিজের কাজে নিজের উন্নতি হোক মাত্র, এটা বিশ্বাস করেন না। ইনি চান, তার কর্তব্যে, তার কর্মে অন্য দশজনও সমান উন্নত হোক, সমান উপকৃত হোক। সমাজ- সামাজিকতার কল্যাণার্থে যেসব কাজ হতে পারে, তদ্বিষয়ে তার সমধিক ঝোঁক এবং এসব করেই ইনি প্রসিদ্ধি লাভ করতে পারবেন।
প্রতিটি বিষয়ের গুঢ় রহস্যদাঘটনে তার যোগ্যতা থাকবে। যুক্তি প্রমাণবহির্ভূত কোন বিষয় বা কর্ম জাতকের রুচিবিরূদ্ধ। নবতর কোন তত্ত্বের প্রতি আকৃষ্ট হলেও ইনি যখন বুঝতে পারবেন, তার মূলগত কোন ভিত্তি নেই, যুক্তি-প্রমাণগ্রাহ্য নয়, সাধারণের কল্যাণসাধন তাদিয়ে সম্ভব নয়, তখনই ইনি ফিরে আসবেন সে পথ হতে, সে আদর্শ থেকে। ইনি সত্য ও সুযুক্তিপ্রিয়। যেসব কাজের ভবিষ্যৎ উজ্জল ও সুনিশ্চিত, তেমন সব কাজেই ইনি হাত দেবেন। দেশ ও সমাজের কল্যাণার্থে সবকিছু করতে আগ্রহী হওয়ায় সবাই তাকে ভালবাসবে, শ্রদ্ধা করবে।
আত্মসম্মান জ্ঞান জাতকের প্রবল। সম্মানহানির বিন্দুমাত্র কারণ উপস্থিত হলেও ইনি হঠাৎ রাগান্বিত হয়ে এমন কিছু একটা করে বসতে পারেন, যাতে সাধারণ্যে তিনি নিন্দভাজন হতে পারেন। তবে জাতক বিশেষ ক্রোধী নয়, কিন্তু একবার রেগে গেলে তার জ্ঞান ও শিষ্টাচার সবই লোপ পেয়ে যাবে। তখন তার কুৎসিত আচরণ লোকের বিস্ময়ের উদ্রেক করবে। এ সব চিত্তবৈকল্য দূর করার জন্য সদগ্রন্থ পাঠ, সৎ দৃষ্টান্তের অনুসরণ এবং ধীরস্থির মনোভাবাপন্ন হওয়া কর্তব্য।
জাতক পরাধীনতার পক্ষপাতী নন, স্বধীনভাবে স্বমতে সর্ববিধ উচ্চতর কর্মসম্পাদনেই তার সমধিক আগ্রহ বর্তমান। স্বমতবিরুদ্ধ কোন কাজে এর সমর্থন থাকবে না বা সুৎসদয়ে যোগদান করে ইনি মনোকষ্ট উৎপাদন করবেন না। এইরূপ গোঁড়ামির জন্য তাকে অতি অল্প সময়েই সর্বসাধারণের অপ্রিয় হতে হবে এবং ফলে জাগতিক ব্যাপারে তার বহু শত্র“ সৃষ্টি হবে। স্বীয় সুযোগ-সুবিধার উৎকর্ষ সাধনের জন্য সর্বদা সংয়ত হয়ে চলা কর্তব্য। সু-শিক্ষা.সৎসংগ জাতকের চারিত্রিক উৎকর্ষসাধনের সহায়ক। পক্ষান্তরে সংসর্গ বিচার সঠিক না হলে ইনি অসৎ পরিবেশ ও সঙ্গপ্রভাবে অবনতির নিুতম স্তরেও নেমে পড়তে পারেন। অতএব, সাধু সাবধান। অতীব বিচার-বিবেচনা সহকারে সুসঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য সর্বদা চেষ্টা করবেন। অবশ্য ইনি বুদ্ধিমান, যদি সংযত হয়ে কোন মহল জীবকল্যাণকর কর্মে প্রবৃত্ত হন, সাফল্যের যাদুর কাঠি হাতের মুঠোয় আসতে কালবিলম্ব করবে না।
৪# কুম্ভরাশি কর্মদক্ষতা ঃ
সর্ববিধ পরিকল্পনামূলক কাজ জাতকের প্রিয় হবে এবং এতে তিনি সাফল্যও অর্জন করবেন। যোগ্যতা থাকবে বহুমুখীন, তবুও যেসব কর্মে পরিকল্পনা ও উদ্ভাবন শক্তির প্রয়োজন, তৎপ্রতি তার আকর্ষণ প্রবল। কাব্য, সাহিত্য, নাটক, সঙ্গীত, চিকিৎসা, শিল্প, বিজ্ঞান-এসবের কোন একটিতে নিয়োজিত হলেও সমধিক যোগ্যতার পরিচয় দেবেন নিঃসন্দেহে। প্রাচীন নিয়মের একঘেঁয়ে কাজ তার বড়ই অপ্রিয়, পূর্বেও বলেছি। প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব-উপস্থিত বুদ্ধি ও পটুতা যেসব কাজে প্রয়োজন, তাদৃশ্য কাজে যোগদান করে সাফল্যলাভ করবেন ও আনন্দিত হবেন। এতদ্ব্যিত যেসব কর্ম রহস্যময়, বিবিধ সমস্যা জড়িত, গুপ্ত বিষয়াদিপুর্ণ, যেমন আধিভৌতিকতা, মেসমেরিজম (সম্মোহন), তন্ত্র-মন্ত্র, জ্যোতিষ-হস্তরেখাবিদ্যা, ইন্দ্রজাল, ভূতবিদ্যা-প্রেতবিদ্যা-এসবে সাগ্রহে ব্রতী হয়ে সুনাম অর্জন করবেন। একাকী কর্মসম্পাদন অপেক্ষা অন্য দশজনের সঙ্গে মিলেমিশে ইনি কাজ করতে আগ্রহী হবেন। সর্ব সাধারণ্যে ইনি প্রশংসা ও সুখ্যতি আশা করবেন এবং তদানুযায়ী কর্মে ব্রতী হবেন। পরিকল্পনামূলক যে কোন বিষয়, কৃষিকার্য, সৈন্যপরিচালনা, অস্ত্রচিকিৎসা, বিজ্ঞানাদির চর্চা, প্রতœ-তত্ত্বালোচনা, অভিনয়, নাট্যাদি পরিচালনা, গোয়েন্দাবৃত্তিতেও ইনি সুনামের অধিকারী হতে পারবেন। কর্মজীবন উন্নতি-অবনতি মিশ্রিত। কর্মক্ষেত্রে বহু শত্র“ ও প্রতিদ্বন্দীর সম্মুখীন হতে হবে। নিজ খেয়ালবশতঃ কখনও কর্মক্ষেত্রে বিঘœ উৎপাদিত হবে। সতর্ক হন, ভূল-ত্র“টি যথাসাধ্য পরিহার করে চলতে চেষ্টিত হন, সুনাম ও সুযশ আপনার দ্বারপ্রান্তে সমাগত।
৫# কুম্ভরাশি কর্মক্ষেত্র ঃ
এরা জীবনযাপনে অত্যন্ত বিলাসী, স্বাপ্নিক ও রুচিশীল হয়ে থাকে। ফলে শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ও এ সম্পর্কিত পেশায় এরা অত্যন্ত দক্ষতা প্রদর্শন করে। ব্যবসা –বাণিজ্য সম্পর্কিত পেশায়ও কুম্ভ লোকেরা উন্নতি করতে পারে। কারণ এরা মিতব্যয়ী ও হিসাবি। সমাজকল্যাণমূলক ক্ষেত্র আপনাদের উপযোগী অন্য একটি কাজের ক্ষেত্র।
*এরা নিজেদের সম্পর্কে অত্যন্ত উচুঁধারণা পোষণ করে। ফলে এদের চলাফেরা ও কথাবার্তা বলায় সাবধান হোন। কারণ পান থেকে চুন খসলেই তুলকালাম কান্ড বেধে যেতে পারে। নিজের মতের বাইরে এরা যেতে চায়না। ফলে এক্ষেত্রে ভুলবুঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে এবং মনে মনে গুমড়ে কষ্ট পাবে কুম্ভ লোকেরা। এদের পা ও রক্ত দুর্বল সাবধানতা প্রয়োজন।
৬# কুম্ভরাশি ভাগ্য ঃ
আকস্মিক অর্থোপার্জন যোগ প্রবল। পক্ষান্তরে কখনও কখনও উপার্জনে কম বেশি হতে পারে। এমনকি, ক্ষেত্র বিশেষে কার্যহানিও হতে পারে। সব বিষয়ে উপার্জনের ব্যাপারে স্বীয় যোগ্যতা ছাড়াও বন্ধুবর্গ সাহায্য করবে। কোন উচ্চতর প্রতিষ্ঠান বা ধনী ব্যক্তির নিকট থেকে কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ দৈবযোগে অর্থপ্রাপ্তিযোগ বর্তমান। পরিশ্রম হিসেবে উপার্জন সর্বদা একভাবের হবে না। কখনও অ্ল্প পরিশ্রমে আশাতিরিক্ত উপার্জন যোগ, আবার কঠিন পরিশ্রমে অল্প আয় যোগ বর্তমান। এরূপ বিচিত্র ব্যাপার বেশ কয়েকবারই জাতকের জীবনে সংঘটিত হবে। অর্থকরী কোন বিদ্যার চর্চায়ও অর্থপ্রাপ্তি যোগ। কোন বিশেষ বিপরীত লিঙ্গীর কাছ থেকেও কিছু অর্থাদি প্রাপ্ত হবেন। পক্ষান্তরে কোন বিশেষ আত্মীয়া বা পরনারীর জন্য আকস্মিক অর্থনাশ হওয়াও বিচিত্র নয়। অর্থকড়ির বিষয়টা একটা কঠিন সমালোচনার বিষয় হয়ে সর্বসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। স্বীয় যোগ্যতায় প্রচুর আয় হবে এবং সঞ্চয়ও হবে তদ্রুপ; কিন্তু খেয়ালীপনার জন্য যদি সঞ্চিত অর্থ নিঃশেষে ব্যয় করে ফেলেন, তাতেও বৈচিত্র্য নেই। এ বিষয়ে সতর্ক হোন।
৭# কুম্ভরাশি পরিণয় ঃ
বৈবাহিক ক্রিয়াটা আকস্মিক এবং অচিন্তনীয়ভাবে ঘটবে। দৈব- প্রতিকুলতায় আকস্মিক বিচ্ছেদও হতে পারে দাম্পত্য-জীবনে। বিবাহ ব্যাপারে ও বিবাহিত জীবনে ঘটনা- বৈচিত্র্যের প্রচুর সমাবেশ দেখা যায়। যাহোক, ভালমন্দ যা কিছুই ঘটুক না কেন, দাম্পত্যজীবন অপরের সমালোচনার বিষয় হয়ে থাকবে। দম্পতিযুগল যদি একটু তৎপর হয়ে মানসিক মিল বজায় রাখেন, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিপূর্ণ হন, তা হলেই সংসার জীবন সুখময় হবে এবং উভয়ে সবার আদর্শস্থানীয় হবেন। কোন বাধা-বিঘœ তার ব্যাতিক্রম করতে পারবে না। গুপ্ত প্রণয়সংক্রান্ত কোন ব্যাপারেও দাম্পত্য জীবনে অশান্তি এনে দিতে পারে। নিজের প্রভূত্বপ্রিয়তা, একগুয়েমি অশান্তির কারণ হতে পারে। এসব দোষত্র“টিবর্জিত হয়ে চলতে শিখুন। তবে যাদের জন্মতিথি শুক্লা দ্বাদশী বা কৃষ্ণা পঞ্চমী অথবা যাদের জন্মমাস আষাঢ়, ভাদ্র, কার্তিক বা ফাল্গুন, এদের সঙ্গে বিবাহ হলে দাম্পত্যজীবন সুখাধিক্যের সম্ভাবনা প্রবল।
৮# কুম্ভরাশি পরিবার ঃ
জীবনে কখনও স্বেচ্ছায় কোন গুপ্ত বা আধিভৌতিক বিষয়ে জড়িত হয়ে সংসারের প্রতি বিরাগভাজন হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে দূরে পড়ে থাকা অসম্ভব নয়। তখন প্রচ্ছন্নভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতেই চেষ্টিত হবেন। পিতা-মাতা কোন একজনের আকস্মিক মৃত্যুযোগ পরিলক্ষিত হয়। এতে সংসারে কোনরূপ বিপর্যয়ও এসে পড়তে পারে। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সৌহার্দ থাকবে। তবে তন্মধ্যে দু’চারজনের সঙ্গে সবিশেষ ঘনিষ্ঠতা জন্মাবে এবং তাদের জন্য মাঝে মাঝে ঝঞ্ঝাটও সৃষ্টি হবে। কারও সঙ্গে ভবিষ্যতে মতবিরোধহেতু বিচ্ছেদ হওয়াও অসম্বব নয়। সন্তানাদি অল্প হবারই সম্ভাবনা, তাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে মতবিরোধহেতু বিচ্ছেদ হওয়াও অসম্ভব নয়। সন্তান না হলে অন্য কাউকে পালক বা পোষ্যপুত্ররূপে গ্রহণের সম্ভাবনা, কিন্ত এ ব্যাপারেও জাতককে প্রচুর অপবাদগ্রস্থ হতে হবে। জাতক খুব øেহপ্রবণ,ইনি যাকে øেহচক্ষে দেখবেন, তাকে তার অদেয় কিছুই থাকবে না। এমনকি, তার জন্য ইনি স্বীয় প্রাণ বলিদান করতেও কুন্ঠিত হবেন না। তবে এমন ক্ষেত্রেও আকস্মিক কোন ব্যাপারে বিচ্ছেদ হতে পারে।
৯#স্বাস্থ্য ঃ
কঠোর পরিশ্রম, অনাচার-অত্যাচার, নিদ্রাহীনতা, অযতœ-অবহেলায় শরীর ভেঙ্গে পড়তে পারে। তবে বিশেষ এবং কিভাবে কোন বিয়মে চললে স্বাস্থ্য ভাল থাকবে, তা তিনি বুঝে উঠতে পারবেন না এমনকি চিকিৎসকও সেটা নির্ণয় করতে পারবেন না। স্বাস্থ্যে এ বিচিত্র ভাবটা জাতকের আজীবন বেচেঁ থাকবে। জাতকের মনোবল অটুট ও প্রবল। কোনরূপ রোগব্যাধি তার এই মানসিক বলের তারতম্য ঘটাতে পারবে না। অনেক ক্ষেত্রে বিনা ঔষধ ও চিকিৎসায়ই তিনি আরোগ্য হবেন। তবে কোন সময়ে তার জন্য মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। জাতকের নাড়ি সমুহ দুর্বল, রক্তচলাচল অনিয়মিত। হঠাৎ কোন দৈব দুর্ঘটনায় কষ্ট পেতে পারেন। উপযুক্ত স্থানে বসবাস, নিয়মিত পান-ভোজন, মন প্রফুল্ল রাখা, দুশ্চিন্তামুক্ত হওয়া, খেলাধূলা, সৎসঙ্গ, সদগ্রন্থ পাঠ সুস্বাস্থ্যের কারক।
১০# কুম্ভরাশি প্রণয় ঃ
যেসব জাতক জাতিকার জন্মতিথি শুক্লা দ্বাদশী ও কৃষ্ণা পঞ্চমী অথবা জন্মমাস আষাঢ়, কার্তিক বা ফাল্গুন এসব ব্যক্তির সঙ্গে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব হবে। জাতক সরলমনা, সকলের সঙ্গে মেলামেশা করতে ভালবাসবে আর অন্য সকলেও তাকে ভালবাসবে। বন্ধু যোগ প্রবল। বন্ধুজনদের মধ্যে ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই থাকবে; সকলের সঙ্গেই ইনি সানন্দে মিলিত হবেন। ধার্মিক, রাজনীতিবিদ, আইনবেত্তা, উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি-এরা তার জাতককে সব বিষয়ে সাহায্য করবেন। কর্মক্ষেত্রেও সহকর্মী ও অধীনস্থদের মধ্য থেকেও তার বন্ধুলাভ হবে। কিন্তু কোন আকস্মিক ব্যপারে বিচ্ছেদ হওয়া বিচিত্র নয়। এমনকি কোন বন্ধু শত্র“সাধনও করতে পারে। শিক্ষিত বন্ধুবর্গের মধ্যেও কেউ তার প্রাণের বৈরী হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী দ্বারা সম্মানহানি যোগ বিদ্যমান। অন্যান্য সবার সঙ্গেই ভাল সম্পর্ক থঅকবে।
১১# কুম্ভরাশি বিবিধ ঃ
জাতকের ভ্রমণ যোগ প্রবল। খেয়ালবশতঃ কখনও স্থান পরিবর্তন ও বিদেশ পর্যটন যোগ বর্তমান । কখনও ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রয়োজন বা বন্ধুদের সনির্বদ্ধ অনুরোধে জল ও স্থলপথে ভ্রমণ যোগ দেখা যায়। চির-প্রচলিত ধর্মমত মানতে ইনি আগ্রহী নন, ইনি চাইবেন সবকিছুর যথাবিহিত সংস্কারসাধন, ভেঙে নতুনভাবে গড়ে তুলতে। তজ্জন্য সাধারণে তাকে ধর্মবিরোধী বা স্বেচ্ছাচারী বলেও মনে করতে পারে। ধর্ম বা যে কোন বিষয়ের গুপ্ত রহস্য-উদঘাটনের প্রতি জাতকের আসক্তি প্রবল। সদগুরুর কৃপায় ইনি সম্মোহন, আধিভৌতিকতা, হঠযোগ, তন্ত্র-জ্যোতিষ-যে কোন গুপ্তবিদ্যায় সবিশেষ পটু হবেন এবং তাতে প্রতিষ্ঠালাভ করবেন। অবশ্য গুরুর অভাবে নিজে খেয়ালমাফিক এসব করতে গেলে বিপদগ্রস্থ হতে পারেন। বাতব্যধি, øায়ূশূল, ইন্দ্রিয়দৌর্বল্য, মনোবিকার এসব রোগ উদ্ভুত হতে পারে যোগ সাধনকালে। অতএব এ বিষয়ে সতর্ক হউন।
১২# কুম্ভরাশি বর্ণ ঃ
নানারূপ মিশ্র রঙ, ছাই রঙ প্রভৃতি রকমারী রঙ জাতকের প্রকৃতই আনন্দদায়ক ও সৌভাগ্যবর্ধক। অসুস্থ অবস্থায় পিঙ্গল বা লাল রঙ স্বাস্থ্যের পক্ষে হিতকর।
১৩# কুম্ভরাশি (শনি/ইউরেনাস) লক্ষণ ঃ
পুরুষ ভাবাপন্ন, বাড়ির পুরোন ভৃত্যের মতো। সকলের উপরে তার কর্তৃত্ব, অথচ তার নিজের কিছুই নাই।
১৪# কুম্ভরাশি (শনি/ইউরেনাস) কি চায় ঃ
নীলদেহীগ্রহ, কোমরে বলয়, শীতল ক্রুর চেহারা। শনির লক্ষণ হলো নিরাশা। জীবনে বারবার নৈরাশ্য আনে এই গ্রহ। শনি বলবান হলে সেই জাতক-জাতিকা শক্তির উপাশক হয়। শনি আধ্যাত্মপদের প্রদর্শক, জীবন থেকে মহাজীবনের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।
১৫# কুম্ভরাশি জন্মকথা (গ্রীক)
পৃথিবীতে কোনো বৃষ্টি নেই। সে অনেক অনেক কাল আগের কথা! পানি ছাড়া কে বা বাঁচতে পারে? পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। সবাই ভাবছে এবার বুঝি মৃত্যুপালা এল! সবাই তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছে পানির জন্য। দেবতারা এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে দেবীদের পাঠিয়ে দেন পৃথিবীতে পানি বিতরণের জন্য। দেবীরা কলসভর্তি পানি এনে পৃথিবীতে ঢালতে থাকেন। পৃতিবী আবার হয় প্রাণচাঞ্চল্যময়। কুম্ভের এই মাসকে তাই বছরের শুরু বলা হয় তখন থেকেই।
১৬# কুম্ভরাশি রতœ ঃ
হীরক, প্রবাল, ধুম্রক্ষেত্র বৈদুর্যমণি প্রভৃতি রতœধারণ ভাগ্য ও স্বাস্থ্যের উৎকর্ষসাধক। অসুস্থ অবস্থায় প্রবাল বা গোমেদ বা রতœধারণ করুন।
৩০# কুম্ভরাশি বৈশিষ্ট্য ঃ বায়বীয়
৩২# কুম্ভরাশি খাদ্য (শনি) ঃ
সাধারণ উত্তেজক ও গরম খাবার হিতজনক। শৈত্য দ্রব্য ক্ষতিকারক। নিরামিষ উপাদেয়।
# কুম্ভরাশি ব্যাধি (শনি) ঃ
প্লীহা, পক্ষাঘাত, যাবতীয় বাত, বধিরতা, ক্লীবতা, উদরী, অজীর্ণ, নাড়ীর রোগ, পায়ের বৈকল্য, শ্বাস, বাযুরোগ, পাগলামী বা (সন্নাসী)।
# কুম্ভরাশি ঔষধি ঃ
শ্বেতবেড়েলার মূল, শমীবৃক্ষ, বিষাক্ত তরুলতা।
# কুম্ভরাশি গুণ ঃ
এরা স্বভাবতই বুদ্ধিমান, ঠান্ডা মাথার মানুষ এবং কাজেকর্মে ভীষণ রকম স্বচ্ছ। সৎ, সত্যান্বেষী, মানবিক, যতœবান, সৃষ্টিশীল, আধ্যাতিক, মুক্তমনা, জনপ্রিয়, সহৃদয়।
৩৯# কুম্ভরাশি দোষ ঃ
এরা দ্বৈত চরিত্রের মানুষ। এরা উষ্ণ, দয়ালু এবং যে কারোর সঙ্গে যেচে বন্ধুত্ব করতে চায় এবং পারে। আবার সামান্য কারণেই সম্পর্কে ইতি টানতে পারে চিরতরে। এটা ক্ষমার অযোগ্য দোষ বললেও অত্যুক্তি হয় না। এরা সাহায্য করতে চায় কিন্তু কাজের সময় পীঠাটান দেয়। বন্ধুত্বেও আমন্ত্রণ জানায় কিন্তু আন্তরিকতার প্রমাণ করতে পারে না। শৃঙ্খলা মানতে নারজ। কথাবার্তায় অসাবধানী, বাতিকগ্রস্থ, খেয়ালী, অকার্যকর, পরিবর্তনশীল, অসংযত, দ্বিধাগ্রস্থ, রীতিবিরুদ্ধ।
৪১# কুম্ভরাশি উপদেশ ঃ
কোনো কাজে নামলে কুম্ভ তার সবটুকু প্রচেষ্টা নিংড়ে দেয়। অনেক সময় বাড়তি কাজের ফলে মারাত্মক এবং এবং নিরাময় অযোগ্য উদ্ভট সব রেগ দেখা দেয়-অতি পরিশ্রম এবং এবং অতি টেনশনের ফলে। নিজ সংসার এবং আপনজনরা কুম্ভের কাছে কাজের চেয়ে নগন্য বলে মনে হয়। ফলে পরিবারের সঙ্গে ভুলবুঝাবুঝি সৃষ্টি হয়। ঠান্ডা মাথায় কুম্ভরা এ বিষয়টি ভেবে দেখলে তার উপকারই হবে। রেগে গেলে এরা দুনিয়া মাথায় করতে চায়।